আর্কিমিডিসের সূত্র

Posted in CategoryGeneral
  • A
    Admin Tue, Jun 18, 2019 6:00 AM

    বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের বিখ্যাত একটি ঘটনার সাথে আপনারা সবাই পরিচিত। ঘটনাটি হচ্ছে এই, একবার রাজা দ্বিতীয় হিয়েরো তার রাজ্যের স্বর্ণকারদের নিখাদ সোনা দিয়ে তার জন্য একটা মুকুট বানানোর ফরমাশ করেছিলেন। স্বর্ণকাররা তাকে সেভাবে সোনা দিয়ে মুকুট বানিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কেন যেন রাজার সন্দেহ হয়েছিল যে স্বর্ণকাররা হয়তো সোনার মধ্যে রূপার খাদ মিশিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেটা বোঝার উপায় কি? স্বর্ণকাররা ছাড়া আর কেউ তো আর মুকুট তৈরির সময় ছিল না। এখন কি করা?

    তো রাজা এক কাজ করলেন। তিনি বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের হাতে ভার দিলেন মুকুটের মধ্যে ভেজাল আছে কি বের করার জন্য। সাথে এটাও বললেন মুকুট যেমন আছে তেমনই রাখতে হবে, এর কোন ক্ষতি করা চলবে না ভেজাল পরীক্ষা করতে গিয়ে।

    আর্কিমিডিস তো পড়লেন মহা ফাঁপরে। এমনিতে ভেজাল বের করা ব্যাপার ছিল না। মুকুট গলিয়ে একটা নির্দিষ্ট আকৃতিতে এনে আয়তন বের করে সেটা দিয়ে নিক্তি দিয়ে মাপা ভরকে ভাগ দিলেই ঘনত্ব বের হয়ে আসত। সেই ঘনত্বের সাথে নিখাদ সোনার ঘনত্ব তুলনা করলেই বোঝা যেত আসলেই মুকুটে খাদ ছিল কি না।

    কিন্তু এই মুকুটকে তো গলানো যাবে না, রাজার হুকুম! এখন কি করার? চিন্তায় চিন্তায় কপালে বেশ কয়েকটা ভাঁজ পড়ে গেল বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের। চিন্তার এক পর্যায়ে তিনি বাথট্যাব (হ্যাঁ, প্রাচীন আমলের বাথট্যাব) এর মধ্যে গোসল করতে নামলেন। গোসল করতে গিয়ে একসময় তিনি দেখলেন, তিনি পানিতে নামার জন্য পানির লেভেল উপরে উঠে যাচ্ছে। অর্থাৎ তার শরীর পানিকে সরিয়ে দিচ্ছে কিংবা অপসৃত করছে।

    সাথে সাথে একটা বুদ্ধি খেলে গেল আর্কিমিডিসের মাথায়। পেয়ে গেছেন তিনি তার সমাধান। আনন্দের আতিশয্যে তিনি সেই গোসল থেকে উঠে উলঙ্গ অবস্থাতেই সিরাকাস শহরের রাস্তায় দৌড়াতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন – “ইউরেকা! ইউরেকা!!” (অর্থ, আমি পেয়ে গেছি, আমি পেয়ে গেছি)

    কি পেয়ে গেছেন? আর্কিমিডিস বুঝতে পারলেন, কোন বস্তু পানির মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ডুবে গেলে সে ঠিক নিজের আয়তনের সমপরিমাণ পানি অপসৃত করে। আর্কিমিডিস মুকুটটাকে পানির মধ্যে ডুবিয়ে তার আয়তন নির্ণয় করলেন। তারপর নিক্তিতে করে ভর হিসাব করলেন। এরপর ভরকে আয়তন দিয়ে ভাগ দিয়ে ঘনত্ব নির্ণয় করলেন। দেখা গেল, মুকুটের পদার্থের ঘনত্ব আর নিখাদ সোনার ঘনত্ব এক নয়। ব্যস, বোঝা গেল, মুকুটে ভেজাল দেয়া হয়েছে।

    তো এই বিখ্যাত ঘটনার সাথে সম্পর্কিত আর্কিমিডিসের একটা সূত্র যুগ যুগ ধরে পদার্থবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটাকে আর্কিমিডিসের সূত্র (Archimedes’ Principle) বলে। এই সূত্র মোতাবেক, কোন বস্তুকে পানি/তরলে ডোবানো হলে বস্তুর হারানো ভর তার দ্বারা অপসৃত পানির/তরলের ভরের সমান।

    এখন আসুন জানি হারানো ভর কি। ধরুন আপনি নিক্তি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে বাতাসে থাকা অবস্থায় একটা বস্তুর ভর মাপলেন, আর এরপর ঐ বস্তু পানিতে আংশিক বা পুরোপুরি ডুবে থাকা অবস্থায় ঐ বস্তুর ভর মাপলেন। দুটো কি সমান হবে? উত্তর, না। পানিতে ডুবে থাকলে বা ভাসমান থাকলে নিক্তিতে বস্তুর ভর আসল ভরের চেয়ে কম হবে। যত কম হবে ততটাই হচ্ছে বস্তুর হারানো ভর। অর্থাৎ, নিক্তি দিয়ে মাপা বাতাসে বস্তুর ভর – নিক্তি দিয়ে মাপা পানিতে ডুবে থাকা/ভাসমান অবস্থায় বস্তুর ভর = বস্তুর হারানো ভর।

    অপসৃত পানি কাকে বলে তা নিয়ে আশা করি কোন ব্যাখ্যার দরকার নেই। আমরা জানি প্রত্যেক পদার্থ জায়গা দখল করে, এবং দুটো পদার্থ একই সাথে একই সময়ে একই জায়গা দখল করতে পারে না। সুতরাং একটা বস্তু পানিতে আংশিক বা পুরোপুরি ডুবলে সেই বস্তু পানির সারফেসের নিচে কিছুটা জায়গা দখল করে, সেই জায়গার পানিটুকু তখন আশেপাশে সরে আসে, তার তো আর যাবার জায়গা নেই, তাই সে পানির লেভেল বাড়িয়ে দিয়ে/সারফেসের অবস্থান উপরে তুলে দিয়ে নিজের জায়গা করে নেয়। বলা বাহুল্য যেটুকু পানি বস্তুর কারণে সরে গেল সেটুকু পানিকে অপসৃত পানি বলা হচ্ছে।

    এখন আসি হারানো ভরের সাথে অপসৃত পানির ভরের সম্পর্কে। ধরি একটা বস্তুর ভর M, অভিকর্ষজ ত্বরণ g, আয়তন V, ঘনত্ব D। তাহলে সেই বস্তুকে পানিতে ছেঁড়ে দিলে সে F=Mg=DVg পরিমাণ বল পানির উপর প্রয়োগ করবে। কিন্তু বিনিময়ে পানি তার উপর কি পরিমাণ reaction force প্রয়োগ করবে?

    চিন্তা করুন, বস্তুকে জায়গা করে দিতে গিয়ে বস্তুর সমআয়তনের পানিকে অভিকর্ষের বিপরীতে অপসৃত হয়ে উপরে উঠে আসতে হয়েছে। অর্থাৎ বলা যেতে পারে, অভিকর্ষের বিপরীতে সমআয়তনের পানি বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করেছে। কিন্তু এই বলের মান কত? যদি অপসৃত পানির ঘনত্ব d এবং ভর m হয়, তাহলে বস্তুর উপর অপসৃত পানি কর্তৃক প্রয়োগকৃত বল f=mg=dVg. (যেহেতু অপসৃত পানির আয়তন বস্তুর আয়তনের সমান)

    এখন দেখুন, বস্তুর উপর নিম্নগামী বল বা এর ওজন F=DVg এবং ঊর্ধ্বগামী বল (যাকে আমরা প্লবতা বা byoyancy বলি) f=dVg।

    সুতরাং net ওজন = নিম্নগামী বল – ঊর্ধ্বগামী বল
    = ওজন – প্লবতাজনিত বল
    = F-f
    = DVg-dVg
    = (D-d)Vg।

    এই অবস্থায় বস্তুকে নিক্তিতে মাপলে ভর কত পাওয়া যাবে? বুঝতেই পারছেন, (D-d)V।

    এখন, হারানো ভর = আসল ভর – পানিতে থাকা অবস্থায় নিক্তিতে মাপা ভর
    = m – (D – d)V
    = DV – (D – d)V
    = DV – DV + dV
    = dV যেটা কি না অপসৃত পানির ভর। অর্থাৎ, বস্তুর হারানো ভর অপসৃত পানির ভরের সমান। এটাই আর্কিমিডিসের সূত্র।

    এখন আসুন আমরা এই জাতীয় কিছু সমস্যার মুখোমুখি হই। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে একটা বস্তুর ঘনত্ব নির্ণয় করা যাক, নাকি বলেন?

    ক/ পানির চেয়ে ভারী বস্তু, মেজারিং সিলিন্ডার সহঃ নিক্তির সাহায্যে বাতাসে বস্তুর ভর মাপুন। তারপর বস্তুটি একটা মেজারিং সিলিন্ডারে পানির মধ্যে ফেলে দিন। বস্তু ফেলার আগেপরে পানির লেভেল দেখে বস্তুর আয়তন নির্ণয় করুন।

    ভরকে আয়তন দিয়ে ভাগ করুন। ঘনত্ব পেয়ে যাবেন। (পুরো ক অংশে “পানি”র জায়গায় যেকোনো তরল লিখলেও এটা কাজে দেবে)

    খ/ পানির চেয়ে ভারী বস্তু, মেজারিং সিলিন্ডার ছাড়াঃ এটার জন্য আপনার ল্যাবরেটরির তাপমাত্রায় পানির ঘনত্ব জানা থাকতে হবে। প্রথমে নিক্তির সাহায্যে বাতাসে বস্তুর ভর মাপুন। অতঃপর নিক্তির এক প্রান্ত হতে একটা চিকন হালকা সুতার সাহায্যে বস্তুটি পানির মধ্যে ঝুলিয়ে দিন (বস্তু যেন কোনভাবেই পানির পাত্রের গা স্পর্শ না করে এবং সেটা যেন পানির মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ডুবে থাকে!) এবার বস্তুর ভর নিন। দুটো ভরের পার্থক্য হচ্ছে হারানো ভর। আর্কিমিডিসের সূত্রানুযায়ী, এই হারানো ভর আর অপসৃত পানির ভর সমান। এবার অপসৃত পানির ভরকে পানির ঘনত্ব দিয়ে ভাগ করুন। অপসৃত পানির আয়তন পেয়ে যাবেন। কিন্তু অপসৃত পানির আয়তনই আসলে বস্তুর আয়তন! সুতরাং আমরা বস্তুর ভর পেলাম, আয়তন পেলাম। বস্তুর ভরকে আয়তন দিয়ে ভাগ করে দিন, ব্যস, বস্তুর ঘনত্ব পেয়ে গেছেন।

    গ/ পানির চেয়ে হালকা বস্তু, মেজারিং সিলিন্ডার সহঃ বাতাসে বস্তুর ভর নিন। এবার পানির চেয়ে বেশ ভারী একটা বস্তু নিন। ওটাকে পানিতে ডুবিয়ে পানির লেভেলের পার্থক্য দেখে আয়তন বের করুন। এবার একটা চিকন হালকা সুতা দিয়ে হালকা এবং ভারী দুইটা বস্তু বেঁধে পানিতে ছেঁড়ে দিন যাতে দুইটা বস্তু একসাথে মিলে পানির মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ডুবে যায়। এবার দুইটা বস্তুর একত্রিত আয়তন নির্ণয় করুন। এখন দুইটা আয়তনের পার্থক্য থেকে হালকা বস্তুর আয়তন পাওয়া গেল। হালকা বস্তুর ভরকে আয়তন দিয়ে ভাগ দিন। কেল্লা ফতে। (শুধু পানি না, যেকোনো তরলের জন্য প্রযোজ্য)

    ঘ/ পানির চেয়ে হালকা বস্তু, মেজারিং সিলিন্ডার ছাড়াঃ এটার জন্য আপনার কক্ষ তাপমাত্রায় পানির ঘনত্ব জানতে হবে। বাতাসে বস্তুর ভর নিন। একটা জানা ঘনত্বের পানির চেয়ে ভারী বস্তু নিয়ে সেটার ভর মাপুন। ভারী বস্তু নিক্তির এক প্রান্তে সুতার সাথে বেঁধে পানিতে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে আবার ভর নিন। ভারী বস্তুর দুটো ভরের পার্থক্য হল হারানো ভর।

    এই হারানো ভর হচ্ছে অপসৃত পানির ভর। অপসৃত পানির ভরকে পানির ঘনত্ব দিয়ে ভাগ দিন, অপসৃত পানির আয়তন অর্থাৎ ভারী বস্তুর আয়তন পেয়ে যাবেন।

    এবার ভারী এবং হালকা বস্তুকে একসাথে বেঁধে প্রথমে বাতাসে ভর মাপুন। তারপর দুটো বস্তুকে ওভাবেই পানিতে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে আবার ভর মাপুন। দুটো ভরের পার্থক্য থেকে ভারী+হালকা বস্তুর সম্মিলিত হারানো ভর পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই হারানো ভর হচ্ছে দুটো বস্তু দ্বারা অপসৃত পানির ভর। অপসৃত পানির ভরকে পানির ঘনত্ব দিয়ে ভাগ করুন। ভারী+হালকা বস্তুর সম্মিলিত আয়তন পেয়ে যাবেন।

    এখান থেকে ভারী বস্তুর আয়তন বাদ দিলেই হালকা বস্তুর আয়তন পেয়ে যাবেন। এবার হালকা বস্তুর ভরকে আয়তন দিয়ে ভাগ করুন। ইউরেকা! আমরা ঘনত্ব পেয়ে গেছি!!

    ঙ/ পানির চেয়ে হালকা বস্তুর ঘনত্ব নির্ণয়, নিক্তি নেই, শুধু মেজারিং সিলিন্ডার আছেঃ পানির চেয়ে হালকা বস্তু পানিতে ভাসতে দিন। অপসৃত পানির আয়তন মাপুন। এবার একটা পানির চেয়ে বেশ ভারী বস্তু নিয়ে পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে সেটার আয়তন মাপুন। এবার দুটোকে একসাথে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে দুটোর সম্মিলিত আয়তন মাপুন। দুটো আয়তনের পার্থক্য থেকে হালকা বস্তুর আয়তন নিন। এবার অপসৃত পানির আয়তনের সাথে পানির ঘনত্ব গুণ করে বস্তুর আয়তন দিয়ে ভাগ করুন। ব্যস, ঘনত্ব পেয়ে গেলেন আপনি।

    চ/ পানির ঘনত্ব ব্যবহার করে অন্য তরলের ঘনত্ব নির্ণয়ঃ একটা পানির চেয়ে ভারী বস্তু নিন। ভর মাপুন। অংশ খ ব্যবহার করে ভারী বস্তুর আয়তন নির্ণয় করুন। এবার ভারী বস্তু অন্য তরলের মধ্যে ছেঁড়ে দিয়ে আবার ভর মাপুন। দুটো ভরের পার্থক্য থেকে হারানো ভর মাপুন। হারানো ভরকে ভারী বস্তুর আয়তন দিয়ে ভাগ দিন। ব্যস, তরলের ঘনত্ব নির্ণীত।

    ছ/ পানিতে মিশে যায় এমন বস্তুর ঘনত্ব নির্ণয়ঃ প্রথমে অংশ চ ব্যবহার করে অন্য একটা তরল, যাতে ঐ বস্তু মিশবে না, এর ঘনত্ব মাপুন। এরপর ক, খ, গ, ঘ – আপনার শর্তমোতাবেক যেকোনো একটা অংশ অনুসরণ করে পানির জায়গায় তরল নিয়ে বস্তুর ঘনত্ব মাপুন।

    এবার আসুন দেখি একটা বহুল প্রচলিত সমস্যা সমাধান করি। সমস্যাটা হচ্ছে, একটা বড় চৌবাচ্চায় একটা নৌকার উপর একজন লোক বসে আছে। তার হাতে একটা পানির চেয়ে ভারী পাথর। লোকটা যদি পাথরটা হাত থেকে পানির মধ্যে ফেলে দেয়, তাহলে পানির সারফেসের লেভেল বাড়বে নাকি কমবে?

    এখন ধরি, পানির ঘনত্ব = D
    নৌকা+মানুষের ভর = M
    চৌবাচ্চার পানির আয়তন = V
    পাথরের ভর = m
    পাথরের আয়তন = v
    সুতরাং, পাথরের ঘনত্ব, d = m/v সুতরাং v = m/d …….. 1

    এখন আমরা আমাদের সুবিধার্থে অঙ্কটাকে দুই ভাগে ভাগ করি।

    ১/ পাথরটা নৌকায় বসা মানুষের হাতে থাকার সময়ঃ

    নৌকা+মানুষ+পাথরের ভর = M+m

    এখন, যেহেতু মানুষ এবং পাথর নিয়ে নৌকা ভেসে আছে, এবং এই অবস্থায় কোন বিশাল বড় নিক্তি নিয়ে সম্মিলিত ভর মাপলে শূন্য পাওয়া যাবে, সুতরাং সম্মিলিত পুরো ভরটাই হারানো ভর।

    অর্থাৎ, হারানো ভর = অপসৃত পানির ভর = M+m

    সুতরাং, অপসৃত পানির আয়তন = অপসৃত পানির ভর/পানির ঘনত্ব = (M+m)/D

    অর্থাৎ, চৌবাচ্চার পানির effective মোট আয়তন (যা বাড়লে পানির সারফেসের লেভেল বাড়বে এবং কমলে পানির সারফেসের লেভেল কমবে) = চৌবাচ্চার পানির আয়তন + অপসৃত পানির আয়তন = V + (M+m)/D

    ২/ পাথরটা পানির নিচে ডুবে যাবার পরঃ

    নৌকা+মানুষের ভর = M

    আগের ব্যাখ্যানুযায়ী এটার পুরোটাই হারানো ভর। অর্থাৎ, হারানো ভর = অপসৃত পানির ভর = M

    অর্থাৎ, অপসৃত পানির আয়তন = অপসৃত পানির ভর/পানির ঘনত্ব = M/D

    এখন, চৌবাচ্চার পানির effective মোট আয়তন = চৌবাচ্চার পানির আয়তন + অপসৃত পানির আয়তন + পাথরের আয়তন (যেহেতু সেটা এখন পানির নিচে আছে এবং effective মোট আয়তনের একটা অংশ হিসেবে কাজ করছে) = V + M/D + v

    এখন, পাথর পানিতে থাকার যথাক্রমে আগের এবং পরের effective আয়তনের পার্থক্য = [V + (M+m)/D] – [V + M/D + v]
    = m/D – v
    = m/D – m/d ……….(from 1)
    = m (1/D – 1/d)

    যেহেতু পাথর পানির চেয়ে ভারী, তাই d > D
    অর্থাৎ, 1/D > 1/d
    অর্থাৎ, 1/D – 1/d > 0
    অর্থাৎ, m(1/D – 1/d) > 0

    অর্থাৎ, পাথর ছোঁড়ার আগের effective আয়তন, পাথর ছোঁড়ার পরের effective আয়তনের চেয়ে বেশি হবে।

    অর্থাৎ, পানির সারফেসের লেভেল কমবে।

    এখান থেকে আরও বলা যায়, পাথরের ঘনত্ব পানির সমান হলে, d = D হবে। অর্থাৎ, m(1/D – 1/d) = 0 হবে। সুতরাং, পানির লেভেল অপরিবর্তিত থাকবে।

    আবার, পাথরের ঘনত্ব পানির চেয়ে কম হলে, d < D হবে। অর্থাৎ, m(1/D – 1/d) < 0 হবে। সুতরাং, পানির লেভেল বাড়বে।

    এবার কিছু অনুশীলনী। দেখি আপনাদের ব্যাসিক কেমন।

    প্রশ্ন ১/ পানির চেয়ে ভারী একটা অমিশ্রণীয় তরল পানিতে ফেললে কি ঘটবে?

    প্রশ্ন ২/ একটা পাথর বাতাস কেটে কেটে পড়তে থাকলে তার বেগ বাড়ার হার আর সেই একই পাথর পানির মধ্যে পড়তে থাকলে তার বেগ বাড়ার হার কি সমান?

    প্রশ্ন ৩/ একটা পানির চেয়ে হালকা বস্তুর চারভাগের তিনভাগ পানিতে ডুবে আছে। এই বস্তুর ঘনত্ব পানির ঘনত্বের কয় গুণ?

    প্রশ্ন ৪/ আপনাকে V আয়তনের তিনটা বস্তু দেয়া হল। একটার ঘনত্ব পানির ঘনত্বের দেড়গুণ, দ্বিতীয়টার ঘনত্ব প্রথমটার ঘনত্বের দেড়গুণ, তৃতীয়টার ঘনত্ব দ্বিতীয়টার ঘনত্বের দেড়গুণ। এই তিনটা বস্তু একসাথে পানিতে ছেঁড়ে দিলে মোট কতটুকু পানি অপসারিত হবে? এই তিনটা বস্তুকে আলাদা আলাদা ভাবে পানিতে ছেঁড়ে দিলে প্রত্যেকটা বস্তু কতটুকু করে পানি অপসারণ করবে?

    প্রশ্ন ৫/ লঞ্চে করে পদ্মা পার হচ্ছেন। লঞ্চ যে পদার্থে তৈরি সেগুলোর ঘনত্ব পানির ঘনত্বের চেয়ে অনেক বেশি। ডুবছেন না কেন?

    প্রশ্ন ৬/ একটা বরফের টুকরা পানিতে ভাসছে। গলে যাবার পর পানির লেভেলের কি পরিবর্তন হবে?

    প্রশ্ন ৭/ রাজা হিয়েরোর মুকুটটা যদি সোনার তৈরি না হয়ে পানির চেয়ে হালকা কিছুর তৈরি হত তাহলে কি আর্কিমিডিস কিভাবে রাজার মুকুটের খাদ বের করতে পারতেন? (ধরি আর্কিমিডিসের সূত্র ততদিনে আর্কিমিডিস আবিষ্কার করে ফেলেছেন!)

    ~~~~ সালেহ তিয়াস ~~~~~

Please login or register to leave a response.